প্রশ্ন: আমরা কি নিজেদের "আমেরিকান মুসলিম", "বাংলাদেশী মুসলিম", "সৌদি মুসলিম" বলব?


দ্যা মেক্কান মাইনরিটি শীর্ষক অডিও লেকচারে ইমাম আনওয়ার আল আওলাকি (র: ) কাছে জনৈক আমেরিকান মুসলিম প্রশ্ন করেন - "আমরা কি নিজেদের মুসলিম আমেরিকান বলব?"। প্রশ্নের জবাবে ইমাম আওলাকি (র: ) খুব সুন্দর করে জিনিষটি ব্যাখ্যা করেছেন, যেটা বর্তমান বিশ্বের সকল মুসলিমের জানা প্রয়োজন। তার উত্তরের অনুবাদ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।




ইমাম আওলাকির (র: ) উত্তর:
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এই সুরের কথা আজকাল বেড়ে যাচ্ছে। এবং এই বিষয়টা জাতীয়তাবাদ নিয়ে। ইসলাম এ ব্যপারে কি বলে? আমরা সবাই এসেছি ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তা থেকে, ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে, আমাদের জন্ম বিভিন্ন স্থানে। আর আমরা এটা মানি, এবং আল্লাহ সুবহানাহুতা'লা আমাদের যা দিয়েছেন আমরা সেটার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করি। কোন মুসলিমেরই তার ঐতিহ্যকে বা তার পটভূমিকে খাটো করে দেখা উচিত নয়। এটা একান্ত আল্লাহর ইচ্ছাধীন, এটা এমন একটা জিনিষ যেটা আপনি বেছে নেননি।


এখন, কোন ব্যক্তির জন্য - আমি আরব বা আমি আমেরিকান বা আমি রাশান বা আমি ইংলিশম্যান, এসব বলার মধ্যে কোন ভুল নেই। কিন্তু যে উপায়ে এই আমেরিকানিজমকে উপস্থাপন করা হয় সেটার মধ্যে সমস্যা আছে। কারণ, এটাকে উপস্থাপন করা হয় এমন ভাবে, যেটা পরোক্ষ ভাবে বুঝায় যে আমাদের আনুগত্য এই গঠণতন্ত্র/সিস্টেম আর পন্থার প্রতি। সমস্যাটা এ জায়গাতেই। আমেরিকান হওয়ার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার আনুগত্য আল্লাহর থেকে তুলে নিয়ে একটা দেশের বা একটা জায়গার প্রতি অর্পন করার মধ্য কিছু ভুল আছে।

মুসলিম হিসেবে আপনার আনুগত্য হল আল্লাহ সুবহনাহুতা'লার প্রতি। আর এটা এমন নয় যে বিষয়টা কেবল আমেরিকান মুসলিমদের জন্য, একজন মুসলিম হিসেবে আপনি যেখানেই থাকুন আপনার আনুগত্য আল্লাহর প্রতি। আপনার আনুগত্য কোন আরব দেশের প্রতি নয় বা পাকিস্তানের প্রতি নয় বা রাশিয়ার প্রতি নয় কিংবা আমেরিকার প্রতি নয়। আপনার আনুগত্য কেবল আল্লাহ জন্য। প্রত্যেক মুসলিমের জন্যই এটা নিয়ম।

আমাদের বেশী জোর দেয়া উচিত নয় যে আমরা আমেরিকান। কারণ, আমার মতে এটা একটা মিথ্যা ধারনা তুলে ধরবে। আর এটা পরোক্ষ ভাবে এটা বুঝাতে ব্যাবহৃত হবে যে, আমাদের আনুগত্য একটা রাষ্ট্রের প্রতি বা একটা জাতির প্রতি বা একটা তন্ত্র/সিস্টেমের প্রতি। আল্লাহর প্রতিই আনুগত্য।

আপনি আপনার দেশকে ভালবাসতে পারেন, আপনি যেখান থেকে এসেছেন সে স্থানকে ভালবাসতে পারেন। সাহাবারা যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করলেন, তখন কারও কারও কিছু কবিতার পঙ্ক্তি ছিল যেটা তারা আবৃত্তি করতেন। সেগুলোতে ছিল মক্কায় ফিরে যাবার আকাঙ্খা, যদিওবা মক্কা সেসময় কুফরের ভূমি ছিল। তারা মক্কাকে ভালবাসতেন- তাদের জন্মস্থান হিসেবে, তাদের বাসস্থান হিসেবে। কিন্তু তাদের আনুগত্য মক্কার প্রতি ছিলনা; তাই তারা সেটা ত্যাগ করেছিলেন। তাদের আনুগত্য ছিল আল্লাহর প্রতি এবং তারা মদীনাকে মক্কার উপরে বেছে নিলেন। যদিও তখনো তাদের হৃদয়ে ছিল মক্কার জন্য ভালবাসা।

Blogger Template by Clairvo