মুসা আলাহিসসালামের জীবন থেকে তারবিয়াহ

ইন্নালহামদুলিল্লাআহ নাহ্ মাদুহু ওয়ানাস্তাইনুহু ওয়ানাস্তাগফিরু ওয়ানাস্তাহদি ওয়ানাওউযুবিল্লাহি মীন শুরুরি আন ফুসিনা ওয়ামিন সাইয়্যিয়াতি আমালিনা মাইইয়াহদিইহিল্লাহু  ফালা মুদিল্লালা ওয়ামাইউদলিল ফালা হাদিয়ালা ওয়াআশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহ ওয়াহদাহু লা শারিকালা ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহ আদ্দাল আমানা ওয়া নাসাহাল উম্মাহ ওয়াজাহাদাহ ফিল্লাহি হাককা জিহাদি ইমামুল মিজাহিদিনা ওয়া খাতামুল আম্বিয়াই ওয়াল মুরসালিনা সালাওাতুল্লাহিওাসালামুয়ালাহি আম্মা বাদ।

মূসা আলাইহিওয়াসসালামের কাহিনী কুরআনে সবচেয়ে বেশি বার অবতারণা করা হয়েছে, এবং মূসার কাহিনী এত বড় আর মাহাত্ম্যপূর্ণ যে একজন মনীষী বলেন-কুরআন তো প্রায় মূসার কাহিনী হয়ে যাচ্ছিল।এবং মূসার কথা এত বেশি বার উল্লেখ করার পিছনে বেশ কিছু কারন রয়েছে। সময়ের সীমাবদ্ধতার জন্য আমি কয়েকটি তুলে ধরছি, কেননা আমরা চেষ্টা করব মূসার কিছু ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবার জন্য ইন শা আল্লাহ্  

প্রথম কারণ, মূসা আলাহিসসালাম হলেন জন শ্রেষ্ঠ নবীদের একজন।

দ্বিতীয় কারণ, বনী ইসরাহিল ছিল উম্মাতে মুহাম্মাদির আগে শেষ মুসলিম উম্মাহ।

তৃতীয় কারণ, বনী ইসরাইল হল উম্মতে মুহাম্মাদির পর দ্বিতীয় বৃহত্তম উম্মাহ।

চতুর্থ কারণ, মূসা আলাহিসসালাম এবং ফিরাউনের কাহিনী। যার মাধ্যমে আমরা শিক্ষা নিতে পারি কেননা উম্মাতে মুহাম্মাদির ইতিহাসে অনেক ফিরাউনের মুখোমুখি  হতে হবে।

পঞ্চমত , মূসা আলাহিসসালাম এবং বনী ইসরাইলের কাহিনী। আল্লাহ্ আমাদের বনী ইসরাইলের কাহিনী বর্ণনা করছেন কারণ তারা আমাদের মত মুসলিম ছিল এবং তাদের ভুলগুলো থেকে যেন আমরা শিখতে পারি আর শুধরাই। রাসুলুল্লাআহ বলেছিলেনআমার উম্মাহ থেকে কিছু মানুষ থাকবে যারা বনী ইসরাইল আগের উম্মাহর ভুলগুলো করবে।


আমরা মূসা আলায়হি ওয়াসাল্লামের মায়ের কাহিনী থেকে শুরু করি ইন শা আল্লাহ্ এটা বলা হয়ে থাকে যে ফিরআউন একরাতে স্বপ্নে দেখে পবিত্র ভূমি জেরুসালেম থেকে আগুন এসে সব মিশরীয়দের বাড়ীগুলো পুড়িয়ে ফেলছে কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বনী ইসরাইলদের বাড়ীগুলো অক্ষত থাকছে।

সাভাবিকভাবেই ফিরআউন এর ভাবার্থ জানতে চাইলে তাকে বলা হল, এর অর্থ এই যে বনী ইসরাইল থেকে একটা শিশু জন্ম নিবে যে কিনা ফিরআউনের মৃত্যুর কারণ হবে। কঠোর মনের ফিরআউনের জন্য এটা খুবই সাধারন ব্যাপার ছিল অতঃপর সে তার লোকদের নির্দেশ দেয় যে বনী ইসরাইল থেকে এবছর যত পুত্র সন্তান হবে সবাইকে হত্যা করো। এবং, সে একটা আইন চালু করল যেখানে সব অন্তঃসত্ত্বা বনী ইসরাইল মহিলাদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে সন্তান প্রসবের আগ পর্যন্ত। আর ঠিক যেই সময় সন্তান ভূমিষ্ট হবে তখনই ফিরআউনের সৈন্যরা এসে সন্তানটিকে হত্যা করবে যদি সেটি পুত্রসন্তান হয় আর কন্যাসন্তান হলে জীবিত রাখবে।

মূসা আলায়হিওসাল্লামের মা সেই বছরেই অন্তঃসত্ত্বা হলেন। কিন্তু সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ্ আযযা ওয়াজাল যখন তাঁর বান্দাকে রক্ষা করতে চান তখন ত্রিভুবনের কোন ধরণের শক্তি নেই যে তার কোন ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং, আল্লাহ্ তাঁর মহান অদৃশ্য জ্ঞানের অংশ হিসেবে মূসার মার অন্তঃসত্ত্বা হবার ব্যাপারটি গোপন করে রাখলেন। কিন্তু সমস্যা হল মূসা আলায়হি ওয়াসসালামের জন্মের পর তাঁকে লুখিয়ে রাখাটা তাঁর মার জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়ছিল। এমতাঅবস্থায় আল্লাহ্ সুব হানাহু ওয়তালা কুরআনের আয়াহ নাযিল করলেন, আমরা মূসার মাকে নির্দেশ দেই তাঁকে দুধপান করাতে এবং যখনই তুমি তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে ভীত হও তাঁকে নদীতে ফেলে দাও। এখন, তোমাদের কেউ যদি নীল নদ দেখে থাক জান এর স্রোত কতো শক্তিশালী এবং ওখানে সাতার কাটাটা কতোটা বিপদজনক যদিওবা সে একজন দক্ষ সাঁতারু হয়। তাহলে আল্লাহ্ কিভাবে একজন মাকে তাঁর সন্তানকে নীল নদে ছুড়ে ফেলতে বললেন? আল্লাহ্ বলছেন, তুমি যদি ফিরআউন বাহিনীকে ভয় করো তাহলে মূসাকে ছুড়ে ফেল পানিতে। মূসার মা একধরনের উভয়সঙ্কটে পড়ে যেতে পারতেন কিন্তু তিনি পড়েননি। কেন? আল্লাহ্ তাঁকে কথা দেন যে, কোন ধরণের ভয় বা দুঃখ করো না, মূসা তোমার কাছে ফিরে আসবে এবং সে আল্লাহ্ একজন রাসুল হবে। এখন, যদি আল্লাহ্ উপর ইয়াক্বীন না থাকতো তাহলে তিনি মূসাকে কোনভাবেই ছাড়তেন না, কিন্তু আল্লাহ্ প্রতি শক্ত ইমানের জন্য তাঁর চোখের মনিকে তিনি নীল নদের মতো ভয়ংকর জায়গায় ফেলে দিয়েছিলেন।

অতএব, প্রথম শিক্ষা পাই আমরা এখান থেকে এই যে আল্লাহ্ উপর ইয়াকিন রাখতে হবে যে কোন অবস্থায়। আর এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে আমরা হাতে-হাতে আল্লাহ্ শপথের উপর ইয়াক্বীন রাখার ফল দেখতে পাব ইন শা আল্লাহ্

তারপর, মূসার মা তাঁকে একটা কাঠের বাক্সে করে নীল নদে ফেলে দিলেন এবং মূসার বোনকে বললেন নদের তীর পর্যন্ত ওটাকে অনুসরণ করতে। এবং সুবহানাল্লাহ সব জায়গা ছেড়ে বাক্সটি গিয়ে থামল ঠিক ফিরাউনের প্রাসাদের সামনে। এটা একধরণের ‘irony’  বলা যায়, যে মূসাকে পানিতে ফেলা হয়েছিল ফিরাউনের জুলুম থেকে বাচার জন্য আর বাক্সটি ঠিক ফিরাউনের প্রাসাদেই এসে ভিড়ল। মূসার মা যখন এটি জানতে পারলেন তিনি প্রায় ফিরাউনের প্রাসাদের দিকে যাবার জন্য মন স্থির করে ফেলছিলেন সন্তানকে ফেরত চাবার জন্য। কিন্তু তিনি যদি যেতেন তাহলে কি হত? তারা বুঝে ফেলত যে শিশুটি বনী ইসরাইলের এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হত্যা করত। কিন্তু, আল্লাহ্ বলেন মূসার মা যখন মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে আমরা তাঁর আত্মাকে দৃঢ় করে দিয়েছিলাম যেন সে বিশ্বাসীদের মধ্যে একজন হয়। এটাই হল আল্লাহ্ ওয়াদার উপর ইয়াকিন রাখার ফল।

আল্লাহ্ শক্ত করলেন মূসার মাকে যখন তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। এটাই হল আমাদের দ্বিতীয় শিক্ষা। তুমি যদি আল্লাহ্ দিকে এক পা আগাও আল্লাহ্ তোমার দিকে অনেক পা এগিয়ে আসবেন। তৃতীয় শিক্ষা, ওয়ামা ইয়ালামু জুনুদা রব্বিকা ইল্লাহু। আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানেনা আল্লাহ্ সৈন্য কারা। বাতাস আল্লাহ্ সৈন্য হতে পারে, পানি আল্লাহ্ সৈন্য হতে পারে, ফিরাউনকে পানি ধ্বংস করেছিল। পশুপাখিও আল্লাহ্ সৈন্য হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, যেকোনো কিছুই আল্লাহ্ সৈন্য হতে পারে; আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানেনা। যাই হোক, মূসা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ফিরআউনের সৈন্যরা তুলে নিয়ে যায় এবং যদিও ফিরাউনের প্রাসাদ ছিল দুনিয়ার শয়তানির কেন্দ্র আল্লাহ্ সেখানেও তাঁর একজন সেনাকে রেখে দিয়েছিলেন, ফিরআউনের স্ত্রী। তাঁর স্ত্রী যখন মূসাকে দেখেন, তিনি তাঁকে ভালবেসে ফেলেন এবং নিজের কাছে রাখতে চান ফিরআউনের হয়তো কিছু ধারনা ছিল যে এটা বনী ইসরাইলের শিশু হতে পারে কিন্তু তাঁর স্ত্রী আসিয়ার জিদের জন্য সে রাজি হয়। এতে দেখা যায়, আল্লাহ্ যদি তাঁর বান্দাকে বাচাতে চান তাহলে আল্লাহ্ তাঁকে বাচানোর জন্য কাউকে পাঠাবেন। বনী ইসরাইলের সব শিশুর মধ্যে শুধু মূসা আলায়হিওসাল্লাম শুধু জীবিত ছিলেন। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, মূসা আলায়হি ওয়াসালাম শুধু জীবিত ছিলেন না তিনি বেড়ে উঠেছিলেন ফিরআউনের প্রাসাদে। ফল কি হয়েছিল? ফিরে যাই প্রথম শিক্ষায়, আল্লাহ্ ওয়াদার উপর ইয়াকিন রাখা। আসিয়া যখন মূসাকে দুধ খাবানর চেষ্টা করলেন, মূসা খেলেন না। সুতরাং, ফিরাউনের স্ত্রী এদিক অদিক থেকে সব ধাত্রীদের আনলেন কিন্তু একই ব্যাপার হোল।

অবস্থায় মূসা আলায়হিওসসালামের বোন ফিরাউনের প্রাসাদে এসে বলল, আমি কি এমন একজনের কথা বলব যে এই শিশুকে দেখাশনা করতে পারবে? ফিরাউনের স্ত্রী রাজি হল কারণ শিশুটি একদমই খাচ্ছছেনা এবং মূসার বোন তাঁর মাকে ডেকে আনল। কেউ জানেনা এটা মূসার মা কিন্তু যখনই তিনি তাঁকে নিলেন সঙ্গে সঙ্গে মূসা দুধপান করতে লাগলেন। অতএব, মূসার মাকে প্রাসাদে কাজ করার কথা বলা হল। কিন্তু, যেহেতু এই সময় তাঁর অবস্থান সুবিধাজনক তিনি বললেন যে,  পরিবার দেখার দায়িত্বর জন্য প্রাসাদে আসা তাঁর পক্ষে সম্ভব না যদি মূসার দায়িত্ব তাঁকে নিতে হয় তাহলে মূসাকে পাঠাতে হবে।
 এখন, ব্যাপারটা এই হল যে মূসা আলাহহিওসাল্লামকে তাঁর মার বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তাঁকে তাঁর লুকাতে হচ্ছেনা তাঁকে রাজার সৈন্যরা নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা হোল আল্লাহ্ ওয়াদার উপর ইমান রাখার পুরস্কার। আল্লাহ্ উপর ইয়াকিন থাকলে আল্লাহ্ এমন জায়গা থেকে দরজা খুলে  দিবেন যেখানে থেকে কখন সে সাহায্য আশা করেনি। 


Blogger Template by Clairvo